Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শহর ও গ্রামের ইঁদুর দমনের কলাকৌশল

শহর ও গ্রামের ইঁদুর দমনের কলাকৌশল
ড. সন্তোষ কুমার সরকার

ইঁদুরকে মানুষ পছন্দ করে না, কিন্তু ইঁদুর মানুষকে পছন্দ করে। মানুষ এবং ইঁদুর একই ছাদের নিচে বাস করে। একই টেবিলে আহার করে। মানুষ ইঁদুরের বাসস্থান বনভূমি নষ্ট করে ইঁদুরকে তাদের সাথে থাকতে বাধ্য করেছে। মানুষ ইঁদুরের খাদ্য, বাসস্থান ও পানির জোগানদার। ইঁদুর যখন বনে থাকে তখন এরা ক্ষতিকারক প্রাণী নহে। মানুষ ফসলি জমিতে বিল্ডিং তৈরি করে শহর গড়ছে। ইঁদুরও দিনে দিনে শহর বাসি হচ্ছে। বর্ষাকালের আরম্ভে মাঠের ইঁদুর গ্রামের বসতবাড়িতে এবং শহরে আগমন ঘটে। এজন্য বর্ষাকালে গ্রামের বসতবাড়িতে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইঁদুরের সংখ্যা শহরে না গ্রামে বেশি? আমার মতে শহরে বেশি। কারণ শহরে মানুষের সংখ্যা বেশি, ইঁদুরও বেশি। শহরে সারা বছর ইঁদুরের খাদ্য, বাসস্থান ও পানির নিশ্চয়তা আছে। সারা বছরই ইঁদুরের বংশবিস্তার করার পরিবেশ বিদ্যমান। শহর বলতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা শহরকে বিবেচনা করা হয়েছে। গ্রাম বলতে ফসলের মাঠ বাদে মানুষের বসবাসের ইঁদুরের স্থানকে বিবেচনা করা হয়েছে।
শহরের ইঁদুরের উপস্থিতির স্থান
যেখানে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ করার সুযোগ নেই, সেখানে বিপুল সংখ্যক ইঁদুরের উপস্তিতি পূর্বেও ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষতেও থাকবে। বড় বড় শহরে বড় বড় দালানের একটিও ইঁদুর মুক্ত বিল্ডিং খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসাবাড়িতে ও আঙ্গিনায় ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়াও কাঁচাবাজারের মাছ-মাংস, চাল-ডাল ও সবজি, ফলমূল বিক্রয় এলাকাতে এবং খাদ্যশস্য পাইকারী বাজারে মাঠের কালো ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। মুরগির খামারে ও বাজারের বিক্রয় স্থানে মাঠের কালো ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। বিমান বন্দর ইঁদুরের অভয়াশ্রয় বলা যায়। সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলোতে ইঁদুর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
ইঁদুর মুক্ত কোনো স্থান কোনো শহরে নেই। শহরে বছরে ইঁদুর দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পদ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানগত বা গবেষণার কোনো তথ্য নেই। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি প্রতিবছর প্রত্যেকটি শহরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে।
শহরে ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা মশা নিধনের প্রোগ্রামের মতো ইঁদুর দমনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। ইঁদুরের কারণে পানির অপচয় ও রোগবিস্তার এবং ড্রেনের ক্ষয়ক্ষতি এসব নিয়ন্ত্রণে সবাইকে গুরুত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বে বিবেচনায় ইঁদুর দমন প্রোগ্রাম অন্যান্য দেশের মতো সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা হতে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পেস্টকন্ট্রোল সার্ভিসের মাধ্যমে তেলাপোকা ও ইঁদুর দমন করে থাকে। সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে বাসাবাড়ির ইঁদুর দমন করে থাকে। এ ছাড়াও অফিসে বা বাসাবাড়িতে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি না হলে কেউ ইঁদুর দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করে না। সিঙ্গাপুরের অফিস বা বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় ইঁদুরের উপস্থিতি পেলে শাস্তি প্রদানের আইন করা হয়েছে। এ আইনের উদ্দেশ্য প্লেগের মতো ছোঁয়াছে রোগের বিস্তার রোদ করা। আমাদের দেশেও অনুরূপ আইন করা প্রয়োজন।
শহরের ড্রেনের পাশে, ডাস্টবিনের গর্তের ইঁদুর ফসটক্সিন গ্যাস বড়ি প্রয়োগ করে দমন করা যাবে। প্রতি গর্তে একটি করে গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করতে হবে। সিটিকর্পোরেশন ও পৌরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক বছরের দুইবার ইঁদুর নিধন করতে হবে। বাসাবাড়ি, অফিসের ভিতর ইঁদুর দমনের গ্লুবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। কারণ বিষটোপ ব্যবহার করলে তা খেয়ে এসির বা যন্ত্রপাতির ভিতর মরে থাকতে পারে এবং গন্ধ বাহির হবে। কেচিকল, তারের জীবন্ত ইঁদুর ধরার ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুর এবং চিকা মারা যায়। এক কক্ষে কম পক্ষে ৫-৬টি ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। ইঁদুরের উপস্থিতি যেমন- মলমূত্র বা পায়ের ছাপ, ক্ষতির চিহ্ন দেখামাত্র ইঁদুর মারার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রান্না ঘরের খাবার ঢেকে রাখতে হবে। খাবার না পেলে ইঁদুর থাকবে না। নিচতলার বাহিরে দেওয়ালে ছোট বাক্সে ইঁদুরের বিষটোপ রাখলে ইঁদুর বিষটোপ খেয়ে মারা যাবে এবং বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করবে না বা উপদ্রব থাকবে না।
গ্রামে ইঁদুরের উপস্থিতির স্থান
গ্রামের প্রতিটি বসতবাড়িতে ইঁদুরের কমবেশি উপস্থিতি আছে। কত ইঁদুর আছে তার কোনো পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই। আমাকে একজন কৃষক প্রশ্ন করেছিল যে, তাদের গ্রামে কতটি ইঁদুর আছে? আমি বলেছিলাম যতলোক বাস করে তার চেয়ে বেশি আছে। যদি কোথাও ইঁদুর চোখে পড়ে তবে ঐ স্থানে কমপক্ষে ৫টি ইঁদুর আছে। যতটি গর্ত আছে ততটি মাঠের কালো ইঁদুর রয়েছে। মাঠে পানি আসলে বিপুল সংখ্যক মাঠের কালো ইঁদুর গ্রামের উঁচু ভূমি, বসতবাড়িতে আসে এবং পানি চলে গেলে কিছু সংখ্যক ইঁদুর বসতবাড়িতে থেকে যায়। তাই বর্ষাকাল গ্রামের ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়। এতে দুইটি উপকার হয় যথা : বসতবাড়িতে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং গ্রামের পাশে আমন ফসলের ক্ষতি কম হবে। বসতবাড়িতে মাঠের কালো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও সলই ইঁদুরের উপস্থিতি বেশি রয়েছে। কৃষকের গোলাজাত শস্যের প্রায় ১০-১২% ক্ষতি করে। মাঠে কালো ইঁদুর মাটির ঘরে, উঠানে, খড়ের গাদায়, গরুর খাবার স্থানে বেশি গর্ত করে থাকে। এরা গরিবদের পছন্দ করে তাদের কাঁচা ঘরের জন্য আর ধনীদের পচ্ছন্দ করে খাদ্য শস্য বেশি থাকার কারণে। বসতবাড়ির সবজি যেমন- লাউ, চালকুমড়া, শসা এবং ফলমূলের বেশি ক্ষতি করে গেছো ইঁদুর ও মাঠের কালো ইঁদুর। ঘরের খাদ্যশস্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি করে সলই ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও মাঠের কালো ইঁদুর।
গ্রামের ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
কমিউনিটি অ্যাপ্রোচ : সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে ইঁদুর দমন অথবা মেরে থাকে। এতে সফলতার পরিমাণ অত্যন্ত কম। দমন ব্যবস্থা অল্প সময়ের জন্য কার্যকর থাকে। কারণ ইঁদুর খাদ্য,পানি ও বাসস্থানের জন্য সবসময় স্থান পরিবর্তন করে থাকে। তাই পাড়া অথবা গ্রামের সবাই একযোগে ইঁদুর দমন করা প্রয়োজন। এতে প্রতিবেশির বাড়িতে ইঁদুরের আগমনের সম্ভাবনা কমে যায়। উপদ্রব ও ক্ষয়ক্ষতি কম রাখতে এবং সফলভাবে ইঁদুর দমন করতে হলে কমিউনিটির সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ একটি পাড়ার           কৃষকদের সাথে বসে উঠান সভার মাধ্যমে ইঁদুর দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঐপাড়ায় প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের গর্ত কতটি রয়েছে তার হিসাব করতে হবে। প্রতি গর্তে একটি করে ফসটক্সিন গ্যাস বড়ি প্রয়োগের জন্য ক্রয় করাতে হবে। সবাইকে নিয়ে তাদের দ্বারা গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করাতে হবে। এদের একদিন দমন বিষয়ের উপকারিতা বুঝাতে হবে। ঘরের ইঁদুর দমনের জন্য প্রত্যেক বাড়ির জন্য ৩-৫টি কেচিকল বা তারের ফাঁদ ক্রয় করে একসাথে ব্যবহার করতে হবে।
গোলাজাত শস্যের ক্ষয়ক্ষতি রোধ
গোলাজাত শস্যের ক্ষতি ন্যূনতম ব্যয়ে উন্নত গোলা ব্যবহারের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব। বাঁশের তৈরি শস্যদানা গুদামের প্লাটফর্মে উপস্থাপন করা হয়, যেখানকার খুঁটি টিনের পাতা দিয়ে মুড়িয়ে প্রতিরোধ করা হয় যাতে ইঁদুর মাটি হতে গুদামটিতে আরোহন করতে না পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শস্যদানা গুদামটির ওপরের অংশ অবশ্যই সঠিক টেকসই আবরণ দ্বারা বন্ধ বা ঢেকে রাখতে হবে যাতে ঘরের দেয়াল অথবা ছাঁদ হতে ইঁদুর লাফ দিয়ে অথবা আরোহণ করতে না পারে এমন প্রতিরোধক সম্পন্ন করতে হবে। টিনের পাত অথবা অন্য ধাতব জিনিস দ্বারা বিদ্যমান গুদাম কাঠামোটির উপরি অংশ ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে। পাশে ঝুলে থাকা প্রান্ত ইঁদুরকে আরোহণ বা উঠতে বিরত রাখবে।    
খড়ের গাদার ক্ষয়ক্ষতি রোধ
খড়ের গাদা ইঁদুরের অন্যতম নিরাপদ বাসস্থান, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। খড়ের গাদার নিচে গর্ত খুঁড়ে ও কেটেকুটে ১০-২০% খড় নষ্ট করে থাকে। এ খড় পশুকে খাওয়ালে ইঁদুরবাহিত রোগ দ্বারা পশু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খড়ের গাদা করার সময় মাচা বা মঞ্চ করে রাখলে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি হতে খড়কে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে খড়ের গুণগতমানও ভাল থাকবে। সাধারণত ৬০-৭০ সেন্টিমিটার উঁচু মাচা তৈরি করে খড়ের গাদা তৈরি করলে এবং মাচার নিচের অংশ সব সময় পরিষ্কার রাখলে ইঁদুরের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়।
আঁঠার ফাঁদ দ্বারা ইঁদুর দমন
বাজারে দোকানে ইঁদুর মারার আঠার তৈরি গ্লুবোর্ড বা আঠার ফাদ পাওয়া যায়। ইঁদুরের চলাচলের রাস্তায় পেতে রাখলে ইঁদুর আঠায় আটকা পড়ে যেতে পারে না। ইঁদুর আটকা পড়ার পর যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি তুলে মেরে ফেলতে হবে। কারণ দেরি হলে অন্যান্য ইঁদুর দেখে ফেলে ঐ স্থানে ইঁদুররা যাবে না। তাই একটা ইঁদুর ধরা পড়ার পর আঁঠার ফাঁদ একটু দূরে পাততে হবে। ঘরে একটি আঁঠার ফাঁদ ব্যবহার না করে ২-৩টি ফাঁদ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ইঁদুরভোজী প্রাণী পালন
বিড়াল ও কুকুর পালন করলে ইঁদুরের উপদ্রব কম থাকবে। বিড়ালকে রাতে কম খাবার দিতে হবে। ইঁদুরভোজী বেজি, গুইসাপ মারা যাবে না।
পরিশেষে ইঁদুর যেকোনো পরিবেশে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল জানা স্তন্যপায়ী প্রাণী। একজন কৃষক বলেছেন, ইঁদুরকে মারতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষ ও স্মার্ট হতে হবে। সঠিক দমনপ্রযুক্তি সিলেকশন, সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একের অধিক দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। সারা বছর ধরে সবাই মিলে ইঁদুর মারতে হবে। তবেই খাদ্যশস্য, সম্পদ ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হবেনা। পাশাপাশি দেশ সমৃদ্ধিতে কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। য়

মুখ্য প্রশিক্ষক (অব.),  ডিএই, রূপায়নলোটাস ৬বি, ১৩ তোপখানা রোড, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৪২২২১৫৭
ই-মেইল :  Santoshsarker10@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon